বুধবার, ৬ জুন, ২০১৮

স্টোক কেন হয়, করনীয়:-

স্ট্রোক কেন হয়? আর স্ট্রোক হলেই বা কি করবেন?

স্ট্রোক কি?

ব্রেনের অসুখ হল স্ট্রোক। হার্টের নয়। অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এই ধারনাটাই এখনও পরিষ্কার নয়।  স্ট্রোক হল ব্রেনের রক্তনালির অসুখ। ব্রেনে প্রচুর পরিমাণে রক্তনালি আছে। হার্ট থেকে রক্তনালি ব্রেনে পৌঁছুচ্ছে । এই রক্ত চলাচল কোথাও ব্যাহত হলেই স্ট্রোক হয়।

স্ট্রোক দুই ধরনের–

হেমারেজিক স্ট্রোক-রক্তনালিগুলো ছিঁড়ে গেলে।

ইসকেমিক স্ট্রোক-রক্তনালিগুলো ব্লক হয়ে গেলে।

এই রক্ত চলাচল দুটো কারনে ব্যাহত হয়। প্রচণ্ড প্রেশারে রক্তনালিগুলো ছিঁড়ে গেল, একে ডাক্তারি ভাষায় বলে হেমারেজিক স্ট্রোক। অর্থাৎ ব্রেনের মধ্যে ব্লিডিং বা রক্ত জমাট বেঁধে যায়। অন্য কারনটি হল হার্ট থেকে ব্রেনে যে চ্যানেল বা যে রক্তনালি রয়েছে সেখানে কোনো ব্লক থাকলে। কারন এই রক্তনালিগুলো জলের পাইপের মতো। এই পাইপে যদি কোনো ব্লক থাকে তাহলে ব্রেনের কিছু অংশ নিউট্রিশান পাবে না। অক্সিজেন পাবে না। সেই ব্রেন টিস্যুগুলো মরে যাবে। একে বলা হয় ইসকেমিক স্ট্রোক।

স্ট্রোক কেন হয় ? বা কি কি কারনে স্ট্রোক হয়ে থাকে?

স্ট্রোকের অনেকগুলো রিস্ক ফ্যাক্টর আছে। উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান, টাইপ-2 ডায়াবেটিস স্ট্রোকের রিস্ক ফ্যাক্টর।  অনিয়মিত হার্টবিটও অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর l রক্তে চর্বি বা ফ্যাট বেশী হলে, কোলেস্টেরল বেড়ে যায় স্এবং সে ক্ষেত্রেও একটি রিস্ক ফ্যাক্টর তৈরি হয়। মিনি স্ট্রোক বা টিআইএ বা Transient Ischemic attack-এর ক্ষেত্রে আগে কথা জড়িয়ে যায় বা শরীরের একটা দিকে দুর্বল হয়ে পড়ে এগুলি মিনি স্ট্রোকের লক্ষণ। যদিও এগুলি ঠিক হয়ে যায় কিন্তু এই গুলোই হল ওয়ার্নিং সাইন। এগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে, নাহলে ভবিষ্যতে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

স্ট্রোক হলে কিভাবে বুঝব?

স্ট্রোক যে হয়েছে তা বোঝা খুব জরুরী। তা না হলে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যাবে না। আমি যেটা দেখে বুঝি বা সবসময় মনে রাখতে বলি তা হল-FAST। Facial weakness ধরুন মুখের এক দিক বেঁকে গেল, Arm or Leg weakness শরীরের একটা দিকে দুর্বলতা দেখা যায়। Slurring of Speech যদি কথা হটাৎ জড়িয়ে যায়, Time to call ambulance-অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে নিয়ে দ্রুত রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এই কয়েকটি চিহ্ন দেখে ধরে নিতে পারেন যে স্ট্রোক হতে পারে। এর জন্য Sorbitrate নামের ওষুধের প্রয়োজন নেই। এই ওষুধটি একমাত্র বুকে ব্যথা বা হার্ট অ্যাটাক হলেই খাওয়াতে হবে। হার্ট একটা মাসকুলার চেম্বার, তার দেওয়ালেও রক্তনালি আছে। সেখানেও যদি রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে হার্টের টিস্যু কাজ করতে পারে না। তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। ঠিক এই ভাবে ব্রেনে যদি এই ঘটনা ঘটে তাহলে স্ট্রোক হয়ে থাকে।

ইসকেমিক স্ট্রোক হলে সাড়ে ৪ ঘন্টার ভেতর হাসপাতালে নিয়ে আসলে একটা বিশেষ চিকিৎসা রয়েছে তার নাম থ্রম্বোলাইসিস বা ক্লট ব্লাস্টার। একটা ইনজেকশানের মাধ্যমে এটা গলিয়ে ফেলা যায়। এর ফলে দেহের একটা দিক পঙ্গু হবে না। রোগি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে ?

রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে অ্যাম্বুলেন্স আসার আগে পর্যন্ত তাকে পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে রাখুন। কিছু খেতে দেবেন না। অজ্ঞান অবস্থায় ফুসফুসে কিছু খাবার চলে যেতে পারে। থ্রম্বোলাইসিসের চিকিৎসা সুবিধা সব হাসপাতালে নেই। থ্রম্বোলাইসিস বা ক্লট ব্লাস্টার ট্রিটমেন্ট, ইসকেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রেই একমাত্র করা হয়। হেমারেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা করা যাবে না। তাড়াতাড়ি করে সিটি স্ক্যান করলে কি ধরনের স্ট্রোক হয়েছে তা বোঝা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা করা যাবে। ইসকেমিক স্ট্রোক হলে সাড়ে ৪ ঘন্টার ভেতর হাসপাতালে আসলে থ্রম্বোলাইসিস বা ক্লট ব্লাস্টারের চিকিৎসা করা যাবে। আবার ইসকেমিক স্ট্রোক হয়েছে অথচ সাড়ে ৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে সেক্ষেত্রে  থ্রম্বোলাইসিস দেওয়া যাবে না কিন্তু অন্য চিকিৎসা করা যাবে। এরকমও দেখা গেছে ইসকেমিক স্ট্রোক হয়েছে সাড়ে ৪ ঘন্টার ভেতরে হাসপাতালেও এসেছেন কিন্তু অন্য কোনো রোগ আছে তাই থ্রম্বোলাইসিস দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে একজন নিউরোলজিস্টের ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে।

থ্রম্বোলাইসিস বা ক্লট ব্লাস্টার চিকিৎসা পদ্ধতি কি ?

ইসকেমিক স্ট্রোকের ফলে ব্রেনের ওই অংশের রক্তনালি ব্লক হওয়ার ফলে টিস্যুগুলো মরে বা নষ্ট হয়ে যায়। আবার এটার মানে এও নয় যে তার আশেপাশের অংশে রক্তনালিগুলো তৎক্ষণাৎ মরে গেছে। এটাকে আমরা বলি ISCHEMIC PENUMBRA. ব্রেন টিস্যুতে আরো কিছুটা salvageable area আছে। থ্রম্বোলাইসিসে এক রকমের ওষুধ দিয়ে থাকি যার ফলে সেই অংশের salvageable টিস্যুগুলো সচল হয়ে গিয়ে রক্তনালি দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হবে। এর ফলে salvageable বা উদ্ধারযোগ্য টিস্যুগুলো বেঁচে যাবে। মনিটারিং-এর সুবিধা আছে এমন হাসপাতালে থ্রম্বোলাইসিস-এর চিকিৎসা হলে ভাল হয়। এটা যেকোনো জায়গায় দেওয়া যায় না। ভুল চিকিৎসা ফলে যেটা ইসকেমিক স্ট্রোক ছিল তা হেমারেজিক স্ট্রোকেও পরিণত হতে পারে। যাদের থ্রম্বোলাইসিস-এর চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না তাদের রক্ত তরল রাখার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে হয়। স্ট্রোকের পর আবার দুটো ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। এক, ফিজিওথেরাপি করাতে হবে। দুই, আবার যাতে স্ট্রোকে না হয় তার জন্য স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে চলতে হবে।

সার্জারির কোনো ভূমিকা আছে ?

কোনো বয়স্ক মানুষ বাথরুমে যেতে গিয়ে আছাড় খেয়ে পড়ে গেলেন তার মাথায় আঘাত লাগল। এর ফলে রক্তনালি কিছু ছিঁড়ে গেল এবং রক্তটা ব্রেনের বাইরে ক্লট হল।  এই ধরনের স্ট্রোক কে আমরা বলি “সাবডুরাল হেমাটোমা”। এক্ষেত্রে স্কালে একটা ফুটো করে রক্তটা বের করে দেওয়া হয়।

Subarachnoid Hemorrhage নামক স্ট্রোকে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্ট্রোকের চিকিৎসা হল মেডিকেল অর্থাৎ ওষুধের দ্বারা হয়ে চিকিৎসা। সার্জারির তুলনায় মেডিকেল বা ওষুধের দ্বারা  চিকিৎসার ফলাফল বেশী ভাল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন